
রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও সীমান্ত এলাকায় মাদক, সন্ত্রাস এবং মাইন বিস্ফোরণের মতো ঘটনা প্রতিরোধে কড়াকড়ি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন।
বিকাল সাড়ে ৩টায় তিনি ১৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান এবং টাওয়ার থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। পরে ক্যাম্পের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্যাম্প ইনচার্জ (সিআইসি), আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, ‘সীমান্তে যেন আর মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা অঞ্চলগুলোর ঝুঁকি মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করছি।’
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সক্রিয় সন্ত্রাসী চক্র নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘ক্যাম্পের ভেতরে ও বাইরে অস্ত্রধারী যেসব সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে, বিশেষ করে নবী হোসেনের মতো চিহ্নিত অপরাধীচক্র— তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব বাহিনী সতর্ক রয়েছে। কোথাও বিশৃঙ্খলা বা অপরাধমূলক তৎপরতা যেন না ঘটে, সে জন্য গোয়েন্দা নজরদারি ও অভিযান জোরদার করা হচ্ছে।’
পরিবেশ রক্ষার অংশ হিসেবে উপদেষ্টা নির্দেশনা দেন, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় এক লাখের বেশি বৃক্ষ রোপণ করতে হবে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও ভূমি ক্ষয় রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে মত দেন তিনি।
এর আগে দুপুরে কক্সবাজার বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও জেলার অভ্যন্তরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ’ বিষয়ক এক উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভায় অংশ নেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। সভায় সীমান্ত পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট ও মাদক পাচার নিয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘মাদক সমাজে নানা উপায়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি প্রতিরোধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। তবে গণমাধ্যমেরও বড় ভূমিকা রয়েছে— সচেতনতা বাড়াতে সক্রিয় হতে হবে।’
সভায় সেনা, নৌ, বিমানবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড, এপিবিএন, আনসার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ উপস্থিত ছিলেন।
রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে সরকার নিরবিচারে কাজ করে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথে সরকার অগ্রসর, আন্তর্জাতিকভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও অব্যাহত রয়েছে।’