বাস্তব জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহন
আজ আমি বলতে এসেছি কিভাবে আমার জীবনে আমি নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়েছি মাত্র 15বছর বয়সে।আমার লেখায় কোন ভূলত্রুটি হলে ক্ষমার চোখে দেখবেন।
আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী। আর মা গৃহিণী। আমরা কাপ্তাই প্রজেক্টে থাকতাম।আমরা চারবোন এবং আব্বু আম্মু মিলে খুব ভালোই ছিলো আমাদের পরিবার।কিন্তু হঠাৎ 2006সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এমন কিছু নিয়ম করলো।যার জন্য আমাদের গ্রামে চলে আসতে হয়।আব্বুর ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়।গ্রামের চলে আসার পর আব্বু ঢাকায় আবার নতুন করে শুরু করে খালামনির সহযোগিতায়। তারপর চলছিলো সবকিছু ভালোই ।কিন্তু এরই মধ্যে মেয়ে মানুষ এতো পড়াশোনা করে কি করবে ,এই বলে মাত্র নবম শ্রেণীতে থাকাকালীনই আমার বড় বোনকে বিয়ে দিয়ে দেয়।যদিও আমার আপুর হাজব্যান্ড বিয়ের পর পড়াশোনা করিয়েছিল।
আমার পরিবারে আমি মেজ মেয়ে।বরাবরই চঞ্চল ও জেদি প্রকৃতির মেয়ে আমি।ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে একজন ভালো মানুষ হবো,নিজে কিছু করবো।আর সেই স্বপ্ন ও মনে লালন করে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছিলাম।আমি বরাবরই পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলাম।পরীক্ষায় প্রথম স্থানটা যেন আমার জন্যই বরাদ্ধ ছিলো।বরাবরই স্বপ্ন দেখতাম ছোটবেলা থেকেই।কিন্তু সুখ আমার কপালে সহ্য হচ্ছিলনা।আমার সুখ দেখে যেন দুঃখেরও হিংসে হচ্ছে।আমার জীবনের খারাপ সময় শুরু হলো।মাত্র নবম শ্রেনীতে পড়াবস্থায় আমারও পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসে।আমি পরিবারকে মানা করে দিয়েছিলাম যে আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না।আমি আরও পড়তে চাই,নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।এভাবে 1বছর পার করে আমি দশম শ্রেণীতে উঠলাম।বাসায় আমার উপর শুরু হলো মানসিক অত্যাচার শুধুমাত্র বিয়ের জন্য।এভাবে পরিবারে অশান্তি,ঝামেলা সবকিছুর মধ্যে দিয়ে এসএসসি দিলাম।কৃতকার্যও হলাম কিন্তু আমাকে আর কিছুতেই পড়ানো হবেনা আমার কোনও খরচই দেওয়া হবেনা।এরপর সত্যি সত্যিই আমার সবকিছু বন্ধ করে দিলো কেউ ছিলোনা আমাকে সাপোর্ট দেওয়ার মতো।আমাকে সারাদিন উঠতে বসতে কথা শোনানো যেন রুটিন হয়ে গিয়েছিলো।এরই ফাকে ইন্টারে ভর্তি শুরু হয়েছে।আমি কিভাবে ভর্তি হবো শুরু হলো সেই চিন্তা।পরে আমার জমানো কিছু টাকা ছিলো সেই টাকা দিয়ে চুরি করে ভর্তি হয়ে আসছি।কিন্তু প্রথমদিকে একটাও ক্লাস করতে পারিনি।বাসায় জানলে মেরেই ফেলতো।
নিজেই নিজেকে বোঝাতে শুরু করলাম।আমাকে ঘুরে দাঁড়াতে কেউ সাহায্য করবেনা,নিজেই চেষ্টা করতে হবে।পরে আমার এক চাচার সাহায্য উনার বন্ধুর হসপিটালে রিসিপশনিস্টের কথা বলে নার্সিং এ জয়েন করতে বলল শিক্ষানবিশ হিসেবে।প্রাক্টিক্যালি 6মাস আগে কাজ শিখতে হবে কোনও স্যালারী ছাড়া।তারপর মাত্র 3মাসে আমি অনেক কাজ শিখেছি।আমার কাজের আগ্রহ ও কাজ দেখে হসপিটাল কর্তৃপক্ষ আমার স্যালারী ঠিক করলো।কিন্তু সমস্যা বাধলো আরেক জায়গায় আমার যেহেতু বাড়ি থেকে আসা-যাওয়া করে ডিউটি করতে হতো রাস্তায় শুরু হলো প্রচুর উৎপাত ইভটিজিংএর শিকার হলাম।হসপিটালে জানানোর পর তারা আবাসিকে থাকার অনুমতি দিলো।এরপর চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকলাম।হসপিটাল থেকেও খুব সাপোর্ট পেলাম পড়াশোনা নিয়ে আর সেই জন্য আমি তাদের প্রতি খুব কৃতজ্ঞ যে তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে।এর মধ্যে পরিবারের সাথে আমার খুব কম যোগাযোগ ছিলো।এরই মধ্যে আম্মু অনেকবার চেষ্টা করেছে বাড়িতে এনে বিয়ে দেওয়ার।কিন্তু না আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় এখনি বিয়ে করবোনা।এরই মধ্যে এইচএসসি শেষ করি।
3বছর চাকরি করার পর আমার পড়াশোনা নিয়ে কিছু সমস্যার কারনে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে বাড়ি চলে আসি।বাড়িতে আসার পর নিজের খরচ চালানোর জন্য বাড়িতে থেকেই একটা স্কুলে জব করতাম পাশাপাশি টিউশন করতাম।এবার আমি ইচ্ছে করেই ঘর থেকে খরচ নেইনি কারন আমি নিজের খরচেই পড়াশোনা করতে চেয়েছি।এভাবে 2বছর থাকার পর আবার সেই বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা।আর এনিয়ে আব্বু-আম্মুর সাথে সাথে প্রতিবেশীরাও সবাই মিলে নানা কথা শুনাতে লাগলো।
একমুহূর্তে কাউকে পাশে না পেয়ে হতাশ হয়ে সুইসাইড করার সিদ্ধান্ত নিলাম ।কিন্তু পরক্ষণেই আমার মাথায় শুভবুদ্ধির উদয় ঘটলো।আমি নিজেকেই নিজে বলতে লাগলাম আমি যদি মরে যাই তাহলে আমার স্বপ্ন কিভাবে পূরন হবে,কে করবে?আমি তো হেরে যাবো।না যেভাবেই হোক আমার স্বপ্ন আমাকে পূরন করতেই হবে।পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।এরই মধ্যে 18ই অক্টোবর2018তে আমার বিএসএস প্রথম বর্ষের ফলাফল অনুযায়ী ফার্স্ট ক্লাস পেয়ে পাশ করেছি।।সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 2018 সালের 20অক্টোবর ঢাকায় চলে আসলাম।এসে আমার একবন্ধুর মাধ্যমে সাবলেটে বাসা ভাড়া নিয়ে উঠলাম।চলে আসলাম তো ভালো কথা কিন্তু এই অচেনা অজানা শহরে আমি চাকরি কোথায় পাবো।জানাশোনা নেই,রেফারেন্স নেই,লিংক ও নেই।এসবের অভাবে চাকরি পাচ্ছিনা।কিন্তু পরে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে কর্ম এপস সম্পর্কে জানলাম।আর সেই এপসে বিভিন্ন জবের খোঁজ পেয়ে এপ্লাই করে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম।যেহেতু আমি ঢাকায় নতুন কিছুই চিনতামনা পরে গুগল ম্যাপের সাহায্য যেতাম।যাও যেতাম এভাবে কিন্তু 2/3জায়গায় হ্যারেজমেন্টের শিকার হলাম।একদিকে কারো সাপোর্ট না পেয়ে বাবা -মায়ের বিয়ের চাপ অন্যদিকে হ্যারেজমেন্টের শিকার সব মিলিয়ে আমি হতাশ।স্বপ্ন ভেঙে যেতে লাগলো ভাবলাম আমি বুঝি পারবোনা।হেরে যাবো রাতে বাসায় এসে বালিশে মুখ বুজে কাঁদতাম।কিন্তু ওইযে আমি খুব জেদি ভাঙবো তবু মচকাবোনা।আবার নতুন দিনের অপেক্ষায় থাকতাম।এমনি করে আবার ওয়ালটন গ্রুপ নামে একটি কোম্পানি থেকে ইন্টারভিউ কল আসলো।সেখানে গেলাম ইন্টারভিউ দিলাম তারা জয়েন করতে বলল।বাসায় এসে চার রাকাআত নফল নামায পড়ে মহান আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম।এরপর শুরু হলো আমার নতুন জীবন।আলহামদুলিল্লাহ এখন নিজের দায়িত্ব নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছি।এখন আমার পরিবার বুজঝে যে আমি আগে নিজে কিছু করবো তারপর বিয়ে করবো।এখন আর আমাকে আগের মত এত চাপ দেয়না।পাশাপাশি আম্মুকেও নিজের স্যালারী থেকে কিছুটা দিতে চেয়েছি কিন্তু উনি প্রথমে মানা করলেও বোঝানোর পর নিয়েছে।এতে আমি খুবই আনন্দিত!
আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই শিক্ষা নিয়েছি যে যেকোনো পরিস্থিতিতে ভেঙে না পড়ে স্যারের কথা মতো নিজের উপর বিশ্বাস রেখে, স্বপ্ন দেখে,লেগে থাকতে হবে।নিজের উপর কখনোই বিশ্বাস হারানো উচিত না।আমি স্যারকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই যে স্যার এতো সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে।যার জন্য আজ আমি আমার জীবনে যে অধ্যায়ের মুখোমুখি হয়েছি সেটা সবার সাথে বলতে পেরেছি। এই গ্রুপের সান্নিধ্যে এসে উৎসাহিত হয়ে লিখতে পেরেছি।
🍁আসলে “নিজের বলার মতো একটা গল্প”গ্রুপে যুক্ত হয়ে আমি নিজের মধ্যে অনেক পরিবর্তন দেখেছি।নিজের পরিচয় বুক ফুলিয়ে দিতে শিখেছি।এই গ্রুপে এসে ধৈর্য ধারন করে লেগে থাকতে শিখেছি।যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করতে পেরেছি।মানুষের সাথে সহজেই পরিচিত হওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছি।এসব কিছু আমি এই গ্রুপে থেকেই পেয়েছি।আমার বিশ্বাস গ্রুপকে ভালোবাসলে ও গ্রুপে সময় দিলে সেই সময়টা ব্যর্থ হবেনা বরং আমাদেরই লাভ।
🍁আমি গ্রুপের সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই,যারা নিজেকে পরিবর্তন করতে চান,শিখতে চান,নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে চান।তাদের উচিত গ্রুপে সময় দেওয়া।সবার সাথে পরিচিত হয়ে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।কেউ কোন ভালো কাজ করলে তাকে সবাই মিলে উৎসাহিত করা।বিনামূল্যে 90দিনের সেশন ও 10টি স্কিলস শিখে নিজেকে আরো প্রস্তুত করা।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন আমি যেনো আমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি।